• ১১ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৭শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৬ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

শিশু আছিয়া হত্যা মামলা: ২১ কার্যদিবসে দ্রুততম রায়ের দ্বিতীয় নজির

sylhetsurma.com
প্রকাশিত মে ১৭, ২০২৫
শিশু আছিয়া হত্যা মামলা: ২১ কার্যদিবসে দ্রুততম রায়ের দ্বিতীয় নজির

মাগুরা জেলায় আলোচিত শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায়ে একজনকে মৃত্যুদণ্ড ও অপর তিন আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামির নাম হিটু শেখ।

শনিবার (১৭ মে) সকালে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারক এম জাহিদ হাসান এ রায় ঘোষণা করেন। খালাস পাওয়া তিনজন হলেন- হিটু শেখের স্ত্রী জাহেদা বেগম এবং সন্তান সজীব শেখ ও রাতুল শেখ।

আলোচিত এই মামলা দ্রুততার সঙ্গে বিচার কার্য সম্পন্ন হয়।

এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। অভিযোগ গঠন বা বিচার শুরুর ২১ দিনের মাথায় এবং মাত্র ১২ কার্যদিবসের মধ্যে আলোচিত এই মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হলো। ঘটনার মাত্র দুই মাস ১১ দিনের মাথায় এই মামলার রায় হলো।

এর আগে ২০২০ সালে মোংলায় সাত বছর বয়সী এক শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অভিযোগ গঠনের সাত কার্যদিবসের মধ্যে রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই বছরের অক্টোবরের গোড়ার দিকে বন্দর শহর মোংলায় ৭ বছর বয়সী একটি শিশুকে বিস্কুটের প্রলোভন দিয়ে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ ও নির্যাতন করেন তারই প্রতিবেশী ৫৩ বছর বয়সী আব্দুল মান্নান সরদার। ঘটনার রাতেই শিশুটির মামা বাদী হয়ে মামলা করলে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১১ অক্টোবর জুডিশিয়াল আদালত মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এ পাঠায়। পরদিন অভিযোগ গঠন করা হয়। ১৩ অক্টোবর বাদীপক্ষের সাক্ষ্য নেওয়া হয় এবং ১৪ অক্টোবর সাক্ষী, চিকিৎসক, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সদস্য ও তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য নেওয়া হয়। যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করেন জেলা ও দায়রা জজ। মামলা দায়েরের মাত্র ছয় কার্যদিবসে বিচারকাজ শেষ করে সাত দিনের মাথায় রায় ঘোষণা করা হয়।

মাগুরার শিশু আছিয়ার ধর্ষণের মামলার বিচার সম্পন্ন করতে সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিল। জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় অ্যাটর্নি জেনারেলের সমমর্যাদাপ্রাপ্ত আইনজীবী এহসানুল হক সমাজীকে। তিনিও শুনানিতে অংশ নেন।

গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। গত ২৭ এপ্রিল মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ছুটির দিন বাদে টানা শুনানি চলে। আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এ শুনানি হয়।

মামলায় শিশুটির বোনের শ্বশুরকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/ ২ ধারায় (ধর্ষণের ফলে মৃত্যুর অপরাধ), শিশুটির বোনের স্বামী ও ভাশুরকে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশ (ভয়ভীতি প্রদর্শন) এবং বোনের শাশুড়ির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় (অপরাধের আলামত নষ্টের অভিযোগ) অভিযোগ গঠন করা হয়।

গত ১৫ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে শিশুটির বোনের শ্বশুর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ৬ মার্চ সকালে ছোট ছেলের কক্ষে (শিশুটির বোনের স্বামীর কক্ষে) শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেন তিনি। শিশুটি বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। এর আগে ৮ মার্চ শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।