• ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

‘হেভিওয়েট’ বনাম ‘তৃণমূল’

sylhetsurma.com
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১১, ২০১৮
‘হেভিওয়েট’ বনাম ‘তৃণমূল’

সিলেট সুরমা ডেস্ক : বলা হয়ে থাকে, সিলেট-১ আসনে যে দলের প্রার্থী জয়ী হয়, সে দলই সরকার গঠন করে। এমন কিংবদন্তি আর সিলেট থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করাকে প্রায় সব দল রেওয়াজে পরিণত করায় রাজনীতিতে এই আসনটি হয়ে উঠেছে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। এখানে জয়ী হতে চায় সকল দল। দিয়ে থাকে শক্ত প্রার্থী।

সিলেট-১ আসনে এবার প্রার্থী বাছাইয়ের আগে প্রধান দুই দলকেই পরতে হয় বিপাকে। এই আসনে বিএনপির সর্বশেষ সাংসদ সাবেক অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান ২০০৯ সালে প্রয়াত হয়েছেন। আর আওয়ামী লীগের সাংসদ বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আর নির্বাচনের অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। রাজনীতি থেকে অবসরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও একাধিকবার জানিয়েছেন তিনি। ফলে এবার দুই দলকেই খোঁজতে হয় নতুন প্রার্থী।

বিএনপি থেকে পাঁচজন আর আওয়ামী লীগ থেকে ৪ প্রার্থী এবার দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। এরমধ্যে হেভিওয়েট হিসেবে পরিচিত জাতিসংঘের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও অর্থমন্ত্রী চার প্রত্যাশী থেকে ড. একে আব্দুল মোমেনকে বেছে নেয় আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি পরে বিপাকে। এই আসনে দু’জনকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেয় দলটি। দলের ভাইস চেয়ারম্যান, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী ও দলীয় চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়।

এই দু’জনকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়ে সিলেট বিএনপি। একপক্ষ মর্যাদাপূর্ণ এই আসনে হেভিওয়েট প্রার্থীর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ইনাম আহমদ চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান। আর অপর পক্ষ তৃণমূলের নেতা হিসেবে মুক্তাদিরকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান। এ নিয়ে অনেক জল ঘোলার পর সিলেটের সাবেক সাংসদ খন্দকার আব্দুল মালিকের ছেলে আব্দুল মুক্তাদিরকেই বেছে নেয় বিএনপি।

ফলে এবার সিলেট-১ আসনে ১০ প্রার্থী থাকলেও মূলত লড়াই হবে নৌকা প্রতীকের ড. একে আব্দুল মোমেনের সাথে ধানের শীষ প্রতীকের খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের। ‘হেভিওয়েট’ মোমেন বনাম ‘তৃণমূলের’ মুক্তাদিরের মধ্যে কে হাসবেন শেষ হাসি- তা জানা যাবে ৩০ ডিসেম্বর। আর ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলেও এখানে যিনি হাসবেন তার দলও হাসবে শেষ হাসি।

এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, এই আসনের লোকজন সবসময়ই হেভিওয়েট প্রার্থীকে নির্বাচিত করে এসেছে। যিনি পুরো দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন এমন লোককেই নির্বাচিত করেন সিলেট-১ আসনের সচেতন ভোটাররা। আশাকরছি এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ড. আব্দুল মোমেনকেই নির্বাচিত করবেন তাঁর।

তবে ভিন্নমত পোষণ করে সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত সাদেক বলেন, খন্দকার মুক্তাদির হচ্ছেন তৃণমূল মানুষের নেতা। এই এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে তাঁর সম্পর্ক। এলাকাবাসী সুখে-দুঃখে যাকে সবসময় কাছে পায় তাকেই এবার নির্বাচিত করবে।

হেভিওয়েট আর তৃণমূল নিয়ে মতভেদ থাকলেও এক জায়গায় অবশ্যই দু’জনন একই কাতারে। এবারই প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন মোমেন ও মুক্তাদির। ফলে নির্বাচনী রাজনীতিতে তাঁরা দু’জনই নবীন।

ড. একে আব্দুল মোমেন অবশ্য মনে করেন, সিলেটবাসী সবসময়ই নবাগতকে, রাজনীতির বাইরের লোকজনকেও নির্বাচনে আপন করে নিয়েছে।

তিনি বলেন, সিলেট-১ আসনে অতীতে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা বেশিরভাগই রাজনীতির লোক নন। বাইরে থেকে এসেছেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, সাইফুর রহমান কিংবা আবুল মাল আবদুল মুহিত তারা কেউই মূলত রাজনীতিবিদ নন। রাজনীতির বাইরে থেকে দল তাদের নিয়ে এসেছে। এরপর সিলেটবাসীও তাদের মূল্যায়িত করেছে। সিলেট সবসময়ই নতুনকে স্বাগত জানাতে জানে।

সিলেট সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-১ আসনের ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৫৩০ জন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী এম. সাইফুর রহমানকে প্রায় ৩৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন আবুল মাল আবদুল মুহিত। দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি। দেশের সর্বোচ্চ ১২ বার করে সংসদে বাজেট প্রদানের রেকর্ডের যৌথ মালিকানা সাইফুর রহমান ও মুহিতের। এই আসনের সাবেক সাংসদ প্রয়াত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ছিলেন স্পিকার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে।