• ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

আমার পৃথিবী অন্ধকার করে দিও না : জাহেদ

sylhetsurma.com
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯
আমার পৃথিবী অন্ধকার করে দিও না : জাহেদ

আমার পৃথিবী অন্ধকার করে দিও না : জাহেদ

সিলেট সুরমা ডেস্ক : ‘আমার হাত-পা ভেঙে দিলে দাও, আমায় নদীতে ফেলে দাও। তারপরও আমার চোখে চুন দিও না।  আমার চোখ নষ্ট করে দিও না, আমার পৃথিবী অন্ধকার করে দিও না।’- নিজের উপর যখন অকথ্য নির্যাতন চলছিলো তখন নির্যাতনকারীদের কাছে এমন কাকুতি জানিয়েছিলো গোলাপগঞ্জের জাহেদ আহমদ।

এমন কাকুতিতেও দয়া হয়নি নির্যাতনকারীদের। মারধরের পর জাহেদের চোখে চুন ঢেলে দেয় তারা। নির্যাতনে আহত জাহেদ এখন ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার চোখদুটি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

জাহেদের বাড়ি গোলাপগঞ্জের বাঘা ইউনিয়নের বাঘা দৌলতপুর গ্রামে। একই ইউনিয়নের রস্তমপুর গ্রামের রায়ুব আলী ওরফে ছানু মিয়া ও তার সহযোগীরা মিলে জাহেদকে এমন বর্বর নির্যাতন করে বলে অভিযোগ ওঠছে। এ ঘটনায় ছানু মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সোমবার ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন জাহেদ আহমদ। তার চোখ দুটি প্রায় থেঁতলে গেছে। চোখের পাপড়ি মেলারও ক্ষমতা নেই।

জাহেদ আহমদ সেদিনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানান, বাঘা রস্তমপুর গ্রামের ছানু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে হুন্ডির ব্যবসার সাথে জড়িত। তার হয়ে জাহিদ ও একই গ্রামের সহির উদ্দিনের ছেলে জুবায়ের আহমদ কাজ করতেন। বিভিন্ন জায়গায় টাকা আনা নেওয়া তাদের কাজ ছিল। গত ৩মাস আগে একস্থান থেকে অন্য স্থানে টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় সিলেটে ছিনতাইকারীরা হুন্ডির টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়।

জাহিদ বলেন, বিষয়টি সাথেসাথে ছানু মিয়াকে জানালেও তিনি টাকা ছিনতাই হয়েছে বলে বিশ্বাস করতে পারছেন না। এজন্য গত রোববার রাতে ছানু মিয়া আমাকে বাড়িতে ডেকে পাঠান। আমি বাড়িতে গেলে পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে ছানু ও তার সহযোগীরা আমার মুখ ও হাত-পা বেঁধে ফেলে। প্রথমে আমায় মারধর করে গাড়িতে তোলার কথা বলে সুরমা নদীর পারের একটি জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে ২/৩জন লোক আমার বুকে পা রেখেও টাকা নিয়েছি এই কথা স্বীকার করতে বলে। একটানা ৩ ঘণ্টা বিভিন্নভাবে আমায় তারা নির্যাতন করে।

জাহেদ আরও বলেন, যখন পানির জন্য আমি চিৎকার করে তখন তারা পানির বদলে আমার মুখে চুন মিশানো পানি ঢেলে দেয়। এরপর তার দু’চোখে চুন মেশানো ঢেলে দিয়ে গাছের সাথে বেধে আমাকে ফেলে রেখে চলে যায়।

এ নির্যাতনের ঘটনায় জাহেদের পিতা বাছই মিয়া বাদী হয়ে ছানু মিয়াকে প্রধান আসামী করে একটি মামলা (মামলা নং-০৪/তারিখ-১০. ০২. ১৮ইং) দায়ের করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি (অপারেশন) দেলোয়ার হোসেন জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামী ছানু মিয়ার রিমান্ড চাওয়া হবে আদালতে। এ ঘটনার সাথে আর কে কে জড়িত ছানু মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে।

এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার রাতে এলাকাবাসী প্রতিবাদ সভা করেছে। প্রতিবাদ সভায় তারা এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও ছানু মিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে।

উল্লেখ, গত ৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাতে গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা রস্তমপুরে গ্রামের ইসহাক আলীর পুত্র রায়ুব আলী ওরফে ছানু মিয়া নিজ বাড়িতে নিয়ে জাহেদ আহমদকে শারীরিক নির্যাতন করেন। পরের দিন সকালে এলাকাবাসী জাহেদকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে ও গোলাপগঞ্জ মডেল থানাপুলিশকে অবগত করে। খবর পেয়ে পুলিশ ছানু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে।