• ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে, কিন্তু সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত আগস্ট ২৭, ২০১৬

সিলেট সুরমা ডেস্ক::::  পৃথিবীর সর্বাধুনিক আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হবে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ‘ তিনি আরো বলেছেন, এতে সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও মানুষের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং এই প্রকল্প থেকে বছরে ৩০ কোটি টাকা সিএসআর আসবে। যা এলাকার মানুষের উন্নয়নের জন্য ব্যয় হবে’।
শনিবার বিকেলে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব বলেন । শেখ হাসিনা বলেন, আমি আপনাদের সামনে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে প্রমাণ করে দিব, বাস্তবায়নাধীন রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি করবে না।
আন্তর্জাতিকভাবে গভীর বনভূমির ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ না করার আইন থাকার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের প্রান্ত সীমানা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে এবং বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হতে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত’।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করে আন্দোলনকারীদের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘উন্নয়নবিরোধী একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই আন্দোলনকারীদের মূল খুঁটির জোর কোথায়?’
সুন্দরবনের কাছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করলে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রাণীবৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন দাবি করে শুরু থেকেই বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটিসহ বিভিন্ন স্তরের জনগণ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আন্দোলনের খুঁটির জোর এত দিন পাওয়া যায়নি। এবার আন্দোলনের খুঁটির জোর পাওয়া গেছে। বিএনপি নেত্রী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এসেছেন। আমার মনে হয় এটার মধ্যে ষড়যন্ত্র আছে। তাহলে এত দিন বিএনপি নেত্রী বিরোধিতা করেননি কেন। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে যদি কোনো নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই থাকত, তাহলে তারা অনেক আগেই তা জনসম্মুখে প্রকাশ করত।
খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনকে ‘মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি’ বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, রামপাল সুন্দরবন থেকে ৬৫ কিলোমিটারের বেশি দূরে। এর বায়ুপ্রবাহ সুন্দরবনের উল্টোদিকে। খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমার একটা প্রশ্ন আছে। যারা রামপালের বিরোধিতা করে রোডমার্চ করছেন, আন্দোলন করছেন, তাদের অর্থ কোথা থেকে আসছে। টাকা-পয়সা কোথায় পাচ্ছেন?

গত সাড়ে সাত বছরে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছেন বলে দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, স্বল্প মেয়াদি প্রকল্পের আওতায় কুইক রেন্টাল চালু করি। কুইক রেন্টাল যদি না করতাম, সমস্যার সমাধান হতো কিনা বলেন? কুইক রেন্টাল কেন দিলাম তা নিয়েও অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে, বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। বিএনপি কেবল খাম্বা বানানোর কোম্পানি করেছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের কোনো টেকসই পরিকল্পনা অন্য কোনো সরকার করতে পারেনি। সর্বপ্রথম আমরা বেসরকারি বিদ্যুৎখাতের আইন করি ও উৎপাদন শুরু করি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নশীল বিশ্বে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনেক বেশি, সেই তুলনায় বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ মাত্র এক শতাংশের কিছু বেশি। মূল্য ও প্রাপ্যতার দিক থেকে আজকের বিশ্বে কয়লাই মূল জ্বালানি। আমারা বিদ্যুৎ গ্যাসনির্ভর। কিন্তু গ্যাসসম্পদ সীমিত। সেটি দিনে দিনে হ্রাস পাচ্ছে। তাই আমাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কয়লার দিকে যেতে হবে।
তিনি বলেন, ‘২০০৯ এ দেখি বিদ্যুতের জন্য হাহাকার, তখনই পরিকল্পনা করি। কয়লাই এখন সবচেয়ে নির্ভর যোগ্য জ্বালানি। যৌক্তিক মূল্যে গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ পৌছে দেওয়ার জন্য কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছে’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার জনগণের সেবক তা কাজ দিয়ে প্রমাণ করেছি। অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ছিল কঠিন কাজ’। সম্প্রতি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছে তেল-গ‌্যাস সম্পদ ও বিদ‌্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচি এবং ২৬ নভেম্বর ঢাকায় ‘মহাসমাবেশের’ কর্মসূচি দিয়েছে নাগরিক সংগঠনটি।

 

সিলেট সুরমা/এম/উ/-২০১৬